সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর নাটক বহিপীর pdf ~ All Pdf book

News

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর নাটক বহিপীর pdf

       সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর নাটক  






















Book Review: 
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ (জন্ম; ১৫ আগস্ট, ১৯২২-মৃত্যু: ১০ অক্টোবর, ১৯৭১) যেমন একজন শক্তিশালী কথাসাহিত্যিক তেমনি একজন সার্থক নাট্যকার। তাঁর কথাসাহিত্যের চেয়ে নাটকের প্রচার বা আলোচনা অত্যন্ত কম। তিনি ‘বহিপীর’, ‘তরঙ্গভঙ্গ’, ‘সুড়ঙ্গ’ ও ‘উজানে মৃত্যু’ নামে ৪টি নাটক লিখেছেন। এরমধ্যে শ্রেষ্ঠতর নাটক হলো ‘বহিপীর’ ও ‘তরঙ্গভঙ্গ’। অন্য দুটি নাটকের মধ্যে ‘সুড়ঙ্গ’ হলো শিশু-কিশোরদের জন্য রচিত এবং ‘উজানে মৃত্যু’ অপ্রকাশিত নাটক। এখন আমরা ‘বহিপীর’ ও ‘তরঙ্গভঙ্গ’ নাটক দুটি নিয়ে আলোকপাত করব। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর পূর্বে বাংলাদেশে যে সকল নাটক রচিত হয়েছে তার মধ্যে অধিকাংশই ঐতিহাসিক নাটক। ১৯৪৭-এর দেশভাগের পর মুসলিম ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে এসব নাটক রচিত হয়। এসব নাটকে বৈশ্বিক চিন্তা-চেতনা বা নিরীক্ষাধর্মিতা নেই বললেই চলে। এগুলো দর্শক-মনোরঞ্জন যোগালেও গতানুগতিক ও একপেশে হওয়ার কারণে শৈল্পিকতাও ক্ষুণ্ন হয়েছে অনেক ক্ষেত্রেই। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ-ই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সর্ব প্রথম নিরীক্ষাধর্মী নাটক লেখেন। তাঁর প্রথম নাটক ‘বহিপীর’ (১৯৬০) দিয়েই এর যাত্রা শুরু হয়। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘লালসালু’ (১৯৪৮)-এর মতোই প্রথম নাটক ‘বহিপীর’-এও মুসলিমসমাজ দেহের একটি রোগাক্রান্ত অংশের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করেছেন। বাঙালী মুসলিম সমাজে এসব ভ-পীর, ফকির ও মোল্লার দৌরাত্ম্য যে কী দুঃসহ পর্যায়ে পৌঁছেছে তা দেখা যায় তার ‘লালসালু’ উপন্যাসের মতো ‘বহিপীর’ নাটকেও। এর পূর্বে অবশ্য কাজী ইমদাদুল হকের ‘আব্দুল্লাহ’ উপন্যাসে এবং আবুল মনসুর আহমদের ‘হুজুর কেবলা’ গল্পে ভ-পীরদের স্বরূপ উন্মোচন আমরা দেখেছি। ‘বহিপীর’ নাটকটি স্বল্পায়তনের। চরিত্রও মাত্র ৬টি। নাটকটির কাহিনী বা ঘটনার সময়কাল মাত্র একদিন। বলাচলে সবদিক দিয়েই নাটকটি ক্ষুদ্রতাই প্রকাশ করে। তবে এই ক্ষুদ্রতার মধ্যে আমরা বৃহদায়তনের ছায়াদেখি; দেখি ছোটগল্পের মতো ‘বিন্দুর মধ্যে সিন্ধুর প্রতিফলন’। জেমস জয়েস বা ভার্জিনিয়া উলফ যেমন একদিনের মধ্যে মহাকাব্যিক বিস্তৃতি আবিষ্কার করেছিলেন, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ‘বহিপীর’-এ তেমনটিই যেন নিরীক্ষণ করেছেন। জমিদার হাতেম আলি বজরা নৌকায় বেরিয়েছেন স্ত্রী খোদেজা ও পুত্র হাশেমকে নিয়ে। ঝড়ের কারণে বজরা তাড়াতাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার সময় আরেকটি বজরার সঙ্গে ধাক্কা লাগে। সে বজরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে ওখান থেকে একজন পীর সাহেব হাতেম আলির বজরায় আশ্রয় নেন; এই পীরই হলেন বহিপীর। বৃদ্ধ এবং বিপত্নীক এই পীর তাঁর একজন মুরিদের তরুণী কন্যাকে বিয়ে করেন। ভক্ত মুরিদও সওয়াব কামাতে মেয়ের অনিচ্ছা সত্ত্বেও জোর করে বিয়ে দেয়। এমতাবস্থায় বিয়ের রাত্রিতেই মেয়েটি পলায়ন করে। ঘটনাক্রমে সেই তরুণী তাহেরা আশ্রয় নেয় হাতেম আলির বজরায়। বহিপীর জানে না তাঁর সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী তাহেরা এই একই বজরায় আছে। তিনি তাহেরাকে খুঁজতে থাকেন। আর তাহেরাও বহিপীরের হাত থেকে বাঁচতে চায়। ওদিকে হাতেম আলির জমিদারি নিলামে উঠবে সে চিন্তায় তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। বহিপীর একপর্যায়ে জানতে পারেন তার স্ত্রী তাহেরা এই বজরাতেই আছে। বহিপীরের প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তাহেরাকে তার সঙ্গে নিতে পারেন না; বরং তাহেরা হাশেমের হাত ধরে চলে যায়। বহিপীরের ব্যবস্থাপনায় হাতেম আলির জমিদারিও রক্ষা পাবেÑ এমন ইতিবাচক আভাস দিয়ে নাটকটি শেষ হয়। পীরের আইন সম্মত স্ত্রী তাহেরাকে নিয়ে হাশেম তাঁর চোখের সামনে দিয়ে চলে যায় তবু অসহায় পীরের কোন ক্রোধ প্রকাশ পায় না। বরং তাঁর মুখে শোনা যায় যেন শান্তির বাণীÑ ‘তাহেরা গিয়েছে, যাক। তাহেরা তো আগুনে ঝাঁপাইয়া পড়িয়া যাইতেছে না। তাহেরা নতুন জীবনের পথে যাইতেছে।’ এই বক্তব্যের মধ্যদিয়ে যেন ‘নতুন জীবনের জয়ধ্বনি’ এবং ‘পুরাতন দুনিয়ার’ পরাজয় হয়েছে। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর ‘লালসালু’ উপন্যাসের শেষ পরিণতি যেন ‘বহিপীর’ নাটকে সংযোজিত হয়েছে। ‘লালসালু’ ১৯৪৮ সালে প্রকাশিত হলেও রচিত হয়েছিল ১৯৪০ সালের শেষ দিকে। তখন ভ-পীর-ফকির ও মুসলিম পুরোহিতদের ছিল দোর্দ- প্রতাপ। তাই ওখানে দেখা যায় মোদাব্বের মিঞার ছেলে আক্কাস গ্রামে স্কুল খুলতে পারে না। বরং মজিদ আক্কাসকে স্তব্ধ করতে গ্রামে বিচার-সালিশ বসায়। উপন্যাসের শেষে দেখা যায় খলচরিত্র ভ- মজিদের কোন শাস্তি হয় না এবং ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হলে গ্রামের সাধারণ কৃষকরা মজিদকে দেখে বলে ‘সবই তো গেল, এইবার নিজে বা খামু কি, পোলাপানদেরই বা দিমু কি?’ শুনে মজিদ কঠিন কণ্ঠে বলে, ‘নাফরমানি করিও না। খোদার উপর তোয়াক্কল রাখ।’ এরপর আর কারও মুখ দিয়ে কথা বেরয় না। কিন্তু ‘বহিপীর’-এ দেখা যায় এর উল্টোটা। কারণ ‘বহিপীর’ রচিত হয়েছিল ১৯৫০-এর মাঝামাঝিতে। ততদিনে মুসলিম সমাজব্যবস্থা কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। সমাজের মানুষের মধ্যেও এসেছে কিছুটা জাগরণ। তাই এখানে প্রাচীনপন্থী বহিপীর জয়ী হয় না, জয়ী হয় নতুন চেতনার ধ্বজাধারী হাশেম ও তাহেরা। ‘বহিপীর’ নাটকের কাহিনী নিতান্ত মামুলি; আপাতদৃষ্টিতে এর কাহিনীতে তেমন কিছু পাওয়া যায় না। কিন্তু এই সাধারণ কাহিনীর অভ্যন্তরে ওয়ালীউল্লাহ স্পর্শ করেছেন অতলস্পর্শী স্তর। তাঁর ‘চাঁদের অমাবশ্যা’ উপন্যাসের নায়ক আরেফ আলির মতোই ‘বহিপীর’ নাটকে বহিপীর, হাশেম ও তাহেরাকে করে তুলেছেন অস্তিত্ববাদী চরিত্র। ‘বহিপীর’ নিরীক্ষাধর্মী নাটক হলেও প্রচলিত নাটকের সঙ্গে এর অনেকটাই সাদৃশ্য রয়েছে। এতে মানবজীবনের অন্তর্নিহিত বিষয়ের চেয়ে বহির্জীবনের কথাই ধ্বনিত হয়েছে বেশি। কিন্তু ‘তরঙ্গভঙ্গ’-এ নিরীক্ষাধর্মীর পাশাপাশি রয়েছে সমাজের মৌলিক সমস্যা ও প্রতীকী তাৎপর্য। এর কাহিনী সন্তান-হন্তারক আমেনার বিচারকে ঘিরে গড়ে উঠেছে। এখানে আসামি আমেনার সঙ্গে কাঠগড়ায় রয়েছে সাক্ষী আবদুস সাত্তার নেওলাপুরী, জজ, উকিল, কর্মচারীরা, দর্শক-শ্রোতা প্রমুখ। এ নাটকে এক ভিন্নধর্মী বিচারালয়ের দৃশ্য অবতারণা করেছেন নাট্যকার; যা বাস্তবে দেখা যায় না। প্রথম দৃশ্যে পর্দা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে দেখা যায় জজ বা বিচারক তাঁর আসনে নিদ্রাচ্ছন্ন। সমগ্র মঞ্চ নিস্তব্ধ, সেখানে শুধু বিচারকের নাসিকা ধ্বনি শোনা যায়। শিশুর ক্ষুধার তাড়না সহ্য না করতে পেরে আমেনা নিজ সন্তানকে হত্যা করে। ক্ষুধার কারণে যে জননী নিজ সন্তানকে হত্যা করেছে তার ফাঁসির আদেশ কীভাবে দেবে বিচারক? এ হত্যার দায় কি তার? না যে সমাজে আমেনা জন্মগ্রহণ করেছে, যে সমাজ এই হত্যার পটভূমি তৈরি করেছে তার? এই অমিমাংসিত জিজ্ঞাসাই নাটকের মূলবক্তব্য। বিচারকের মাথায় চিন্তা ঘুরপাক খায় ফাঁসি দিলেই কি ন্যায়বিচার হবে? যে সমাজ তার সদস্যদের খিদের আহার যোগাতে পারে নাÑ ফাঁসির আদেশ দেয়ার কোন এখতিয়ার সে সমাজের বিচারালয়ের নেই । তাই দেখা যায় ‘বিচারক নিদ্রাচ্ছন্ন’... ‘চশমা খুঁজে পাচ্ছে না... ইত্যাদি। নাটকের শেষদৃশ্যে দেখা যায় সত্য অন্বেষণ এবং ন্যায়বিচার করতে বিচারক দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে সময়ক্ষেপণ করছেন। এ অবস্থায় আদালতে উপস্থিত দর্শক-শ্রোতা ‘যুদ্ধংদেহী’ হয়ে ওঠে এবং শেষে বিক্ষুব্ধ জনতার হাতেই আমেনার মৃত্যু হয়। অপরদিকে দেখা যায় ‘ছাদ থেকে জজের দেহ দড়িতে ঝুলছে।’ বস্তুত এ মৃত্যু যেন বিবেকরই মৃত্যু। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর গল্প, উপন্যাস ও নাটকে সর্বত্রই সমাজচেতনা লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু এ চেতনা স্থূল অর্থে সমাজচেতনা নয়। তিনি সমাজচেতনার মধ্যে পাঠক-দর্শকদের মনে জিজ্ঞাসার সৃষ্টি করেছেন। ‘লালসালু’ উপন্যাসে যেমন ‘শেষ হয়েও শেষ হয় না’; খলচরিত্র মজিদের কেন বিচার হয় না? পাঠকের মনে এমন একটি জিজ্ঞাসার সৃষ্টি হয়; তেমনি ‘তরঙ্গভঙ্গ’ নাটকেও বিচারকের হাতে সন্তান-হন্তারক আমেনার বিচার না হওয়ায় একটা প্রশ্ন জাগে। আরও স্তম্ভিত হতে হয় বিচারক নিজে ফাঁসির দড়িতে ঝোলার দৃশ্যে। আমরা জানি সমাজ চলে গদবাঁধা ছকে; এর কোন রকম পরিবর্তন হতে দেখা যায় না। এখানে বিচারক, আসামি সবাই থাকে প্রচলিত সমাজব্যবস্থার হাতে বন্দী। এ প্রসঙ্গে কবি ও সমালোচক আবদুল মান্নান সৈয়দ বলেছেন, ‘সরকার পরিবর্তন হয়, রাজনীতিকেরা স্বাভাবিক উচ্চকণ্ঠে নতুন সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা বলেন, বুদ্ধিজীবীরা বিদ্যুতের চেয়ে দ্রুত বেগে মত বদল করেন কিন্তু সমাজব্যবস্থার একতিল পরিবর্তন ঘটাতে পারে না। যে জননী নিরুপায় হয়ে শিশুকে হত্যা করে, তার ঠিকই ফাঁসি হয়ে যায়।’ পরিশেষে বলা যায়, দার্শনিক তাৎপর্যম-িত উপন্যাস যেমন গোটা বাংলা সাহিত্যে খুবই কম তেমনি রূপক ও তাৎপর্যধর্মী নাটকও হাতেগোনা কয়েকটি। দর্শক-মনোরঞ্জন বা বিনোদনের কথা অধিকাংশ নাটকে থাকলেও মানব অস্তিত্বের মৌলিক সমস্যাগুলো আলোচনা ও মিমাংসার কথা উচ্চারিত হয়েছে কমসংখ্যক নাটকে। বাংলা নাটকে রূপক ও প্রতীকের ব্যবহার চালু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। যে পথ তিনি তৈরি করেছিলেন তাকে দীর্ঘায়িত করতে এগিয়ে আসেননি তেমন কেউ। অনেক পরে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর নাটকেই অস্তিত্ববাদ, রূপক-প্রতীকী দৃশ্যের অবতারণা ও নিরীক্ষধর্মিতার প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়। তাঁর নাটকগুলো দর্শক-মনোঞ্জন করতে না পারলেও শিল্পগুণে বা বিশ্বজনীনতায় অনন্য এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
















সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌ (১৫ আগস্ট ১৯২২ - ১০ অক্টোবর ১৯৭১) ছিলেন আধুনিক

বাংলা সাহিত্যের একজন কথাশিল্পী। কল্লোল যুগের ধারাবাহিকতায় তাঁর আবির্ভাব

হলেও তিনি ইউরোপীয় আধুনিকতায় পরিশ্রুত নতুন কথাসাহিত্য বলয়ের

শিলান্যাস করেন। জগদীশ গুপ্ত, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখের উত্তরসূরি এই

কথাসাহিত্যিক অগ্রজদের কাছ থেকে পাঠ গ্রহণ করলেও বিষয়, কাঠামো ও

ভাষা-ভঙ্গিতে নতুন এক ঘরানার জন্ম দিয়েছেন।


নাটক

বহিপীর (১৯৬০),উজানে মৃত্যু (১৯৬৩),সুড়ঙ্গ (১৯৬৪),তরঙ্গভঙ্গ (১৯৭১)




Book Name: সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর নাটক বহিপীর   - PDF Download

বাংলা বই সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর নাটক বহিপীর 

Book Category : নাটক
Book Writer: সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ
Book Format: PDF File Portable Document Format
Book Language: Bengali
Book Info: Page




























Previous
Next Post »

recent post

তারাশষ্কর রচনাবলী ( ১-২৫ খণ্ড) - তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়

  Tag: তারাশষ্কর রচনাবলী ( ১-২৫ খণ্ড), তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়,রচনাবলী,Tarasankar Rachanabali,তারাশঙ্কর-রচনাবলী,তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায...